পুনর্মিলন
জেহান আলী
প্রতিদিন ঠিক মাগরিবের সময়
লাল টুকটুকে কার্ডিনাল পাখিটা, আমার ঘরে আসে,
যেন সারাটা বছর সে রোজা থাকে,
জানালা দিয়ে তাকে দেখে আমি বুঝি,
সময় হয়েছে, সে এসেছে।
সারাটা রাত মা ছটফট করে,
কি অকল্পনীয় সেই প্রসব যন্ত্রনা
যেন নয় মাসের কষ্ট যথেষ্ট ছিলো না,
ব্যাথায় তার দুনিয়া অন্ধকার ,
ঠিক ভোরের বেলায়, টকটকে লাল সূর্যটা বেরিয়ে আসে,
দিগন্তের ওপার থেকে,
কি শান্ত সে, কি অদ্ভুত সুন্দর তার আভা,
বেয়াড়া, দূরন্ত, নিষ্ঠুর, সূর্য,
মুহূর্তেই দিগন্তের নাড়ি ছিঁড়ে চলে যেতে থাকে,
মা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে,
সন্তান তার বড় হচ্ছে, বুড়ো হচ্ছে,
সন্ধ্যে বেলায়, আবারো, ঠিক সেই দিগন্তের রেখায়,
ম্যাডোনা অ্যান্ড চাইল্ড, পুনর্মিলন।
তোমরা সবাই পুনর্মিলন ভালবাসো,
বারবার তোমরা আয়োজন করো, পুনর্মিলন,
স্কুলের, পাড়ার, বন্ধুদের, কবিতার, গানের,
মরিয়মের ঘরে যীশুর, আমিনার কোলে মুহাম্মদের,
ভাষার সাথে মানুষের, দেশের সাথে স্বাধীনতার,
দুর্দিনের সাথে সুদিনের, অজ্ঞানতার সাথে জ্ঞানের,
লাঞ্ছিত, অত্যাচারিতের সাথে মুক্তিবাহিনীর, যোদ্ধার,
ভাইরাসের সাথে ভ্যাক্সিনের।
মানুষ,
এপার থেকে ওপার,
কারো ডিপারচার, কারো অ্যারাইভাল;
কেউ স্বাধীনতা আনতে নিজের জীবন দেয়,
কেউ দেশ, ব্যক্তি, স্বাধীনতাকে নির্মম ভাবে হত্যা করে,
কেউ ভাইরাস ঠেকাতে মাস্ক পরে, সতর্ক হয়,
কেউ বলে, ‘আমরা তো স্বাধীন, ভাইরাস বলে কিছু নাই,
বোকা কোথাকার?’, সে নিজেই ভাইরাস,
নিজের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করলো, বুঝলোও না।
মানুষ,
সকাল সাঁঝের ভালবাসায়, আবেগে,
নিত্য দিনের মিলনের বিহ্বলতায়, বিচ্ছেদের তীব্রতায়,
তোমরা কেঁদে ফেলো,
সেই অশ্রু পুণ্য, এতোটুকুও ভেজাল নেই সেখানে;
স্বাধীনতার চাইতে সুন্দর কোন কিছু নাই,
বিউটি পার্লারে ওরা পারে না সেরকম করতে।
মানুষ,
কি অদ্ভুত, বীভৎস, সুন্দর প্রানী,
পরাধীন জীবনে একটা বারও মনে করে না স্বাধীনতার স্বাদ ,
একটা পুরো জনম হেসে খেলে কাটিয়ে দেয় নির্বোধ,
সেই মহান পুনর্মিলন তিথীর অপেক্ষায় রেখে দেয় তাঁকে,
“এই বুঝি তুই বাড়ি ফিরলি?
আয়, আমার বুকে আয়, একটু জিরিয়ে নে এখানে,
নিজের ঘরে আবারো স্বাধীন আজ তুই।। ”
পুনর্মিলন,
জেহান আলী, ২০২১
